শ্রোতাকে মুগ্ধ করার কথা বলার ৫টি কৌশল জানাবো আজ। কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এরকম পাঁচটা পরামর্শ যেগুলো আপনি যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে মানুষ তো আপনার কথায় বিরক্ত হবেই না, উল্টা তারা মুগ্ধ হবে এবং হচ্ছে যে আপনাকে সহ আপনার ব্রেনকে তারা দীর্ঘদিন মনে রাখবে ইনশাআল্লাহ।
এই বিষয়গুলো একটু অস্বাভাবিক লাগতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় যে আপনি যদি একটু ধৈর্য ধরে লেখাটা পুরোপুরি শেষ পর্যন্ত দেখেন আমার মনে আপনি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
শ্রোতাকে মুগ্ধ করা কথা বলার ৫টি কৌশল
অনেক মানুষ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অনেকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে আবার কেউবা সাইকোলজিক্যাল মেথডে কথা বলার কৌশলগুলো বলেছেন। কিন্তু আমরা আজ সেরকম কিছু বলতে আসিনি।
এখানে জানার চেষ্টা করবো ইসলামী দৃষ্টিতে কথা বলার ৫টি কৌশল নিয়ে যা আপনার শ্রোতাকে শতভাগ মুগ্ধ করবে এবং আপনি সারাদিন কথা বললেও তারা বিরক্ত হবেনা বা শুনতেই থাকবে।
তাহলে চলুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কোন কথা বলার ৫টি কৌশল আমি আজ আলোচনা করতে চাচ্ছি-
১. কথা বলার উদ্দেশ্যে হবে সওয়াব পাওয়া;
২. অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দেওয়া;
৩. কথায় মুগ্ধতা রাখা;
৪. শ্রোতাকে গুরুত্ব দেওয়া;
৫. বোঝার জন্য শোনা;
কথা বলা উচিত সওয়াব বা নেকি পাওয়ার উদ্দেশ্যে
কথা বলার ৫টি কৌশল এর ১ নাম্বার যে পরামর্শ সেটা হচ্ছে আপনি কথাবার্তা বলবেন সওয়াবের উদ্দেশ্যে, নেকি পাবার উদ্দেশ্যে। আমি একটু ভাঙা ব্যাখ্যা করি। ধরুন আমি যখন কোনো মানুষের সাথে কথাবার্তা বলছি, ওই ক্ষেত্রে আমার যদি মনের মধ্যে উদ্দেশ্য দরকার হয় আমি আসলে নেকি পেতে চাই, সওয়াব পেতে চাই, তাহলে কী কী হবে দেখুন।

আপনি যখনই কথাবার্তা বলছেন, ভাবছেন— আমি আমার এই শব্দটা এইভাবে ব্যবহারের ফলে সে তো বোধহয় কষ্ট পেতে পারে। তাইলে মানুষ যদি কষ্ট পায় তাহলে তোমার গুনাহ হবে, তাইলে এই শব্দটা ফেলে দিই। আবার আমি যখন কথাবার্তা বলছি, এই কথাই তো অশ্লীলতা ফুটে উঠছে, তারপরে যাতে হারাম কাজ গুনাহ হবে তাইলে এটাও আমি স্কিপ করে যাই।
আবার কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে আমি অন্যের সমালোচনা করতে মজা পাচ্ছি, কিন্তু অন্যের সমালোচনা করলে তো গুনাহ হবে, তাইলে ডিসকার্ড করে ফেলি। সুতরাং আপনি যখনই কথাবার্তা বলবেন নেকি পাবার উদ্দেশ্যে বা সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে, তাইলে আপনার কথাবার্তা থেকে এমন অনেক কিছু যেগুলো সম্পর্ক নষ্ট করে, যেগুলোতে গুনাহ হয়, যেগুলো পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে— এই জিনিসগুলো আপনি লক্ষ্য করবেন অটোমেটিকভাবে মাইনাস হয়ে যাচ্ছে।
শুধু ওই যে ব্রেইনে আপনি একটা প্যারামিটার বা একটা ফিল্টার ফেলে রেখেছেন যে আমি যখনই কথাবার্তা বলব সেটার উদ্দেশ্য হলো আমি নেকি পেতে চাই বা সওয়াব পেতে চাই। এটা কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলে করতেন। সো আমরা একটু নোট করছি এই জিনিসগুলো।
আলহামদুলিল্লাহ আমিও চেষ্টা করছি কথা বলার ৫টি কৌশল ফলো করার, এজন্য আপনাদের সঙ্গে আসলে শেয়ারটা করছি। তাহলে ১ নাম্বার পরামর্শ আমি যেটা বললাম, কথাবার্তা আমাদের বলতে হবে নেকি পাবার উদ্দেশ্যে, সওয়াব পাওয়ার জন্য।
তাহলেই আমার কথাবার্তায় মানুষ মুগ্ধ হতে শুরু করবে, কারণ আমার কথাবার্তায় এমন কিছু থাকবেই না যা ঘৃণা ছড়ায়, যা সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করে বা নষ্ট করে। সো এটা একটা ফিল্টার বা একটা পরামর্শ। এটা আমরা ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব।
কথাবার্তাগুলো যেন হয় জামিউন ওয়া মানিউন
কথা বলার ৫টি কৌশল এর ২ নাম্বার বিষয়টা হচ্ছে আমাদের কথাবার্তাগুলো যেন হয় জামিউন ওয়া মানিউন। আমি একটু ভেঙে বলি। জামিউন মানে হলো আমি যখন একটা কিছু মানুষকে বোঝাতে চাই, এইটা বোঝানোর জন্য আমার কথায় যা যা দরকার সবগুলো যদি ঠিকমতো থাকে তাহলে এটা জামিউন।

আবার আমার কথাবার্তায় যে বিষয়গুলোর কোনো দরকার নাই সেগুলো যদি আমি বাদ দিই তাহলে এটা মানিউন। আমি একটা উদাহরণ দিই— ধরুন আপনি একটা ফোন সম্পর্কে কাউকে কিছু বোঝাতে চান।
এখন এইটা বোঝানোর জন্য আপনার যেসব কথা বলা দরকার সবগুলো যদি আপনার কথাবার্তায় থাকে তাহলে এটা জামিউন হলো। আবার যেসব বিষয় বলার কোনো দরকার নাই, খামাখা কথা— এই জিনিসগুলো আপনি স্কিপ করেছেন বা এড়িয়ে চলেছেন তাহলে এটা মানিউন হলো।
তার মানে আপনার কথাবার্তা হলো একদম স্লিম, মানে কোনো চর্বি নাই, কোনো ফ্যাট নাই, আবার আপনার কথাবার্তার মধ্যে কোনো ইনফরমেশন কমও নাই। কথাবার্তাগুলো খুবই দুর্বলও হয়নি। এই যে খুব ব্যালেন্স শব্দ ব্যবহার করে কথাবার্তা বলতে পারা, এটা কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন।
অনেক সময় তিনি কিছু কথা তিনবার বলতেন, মানে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আর যেটার কোনো দরকার নেই সেটা টোটালি স্কিপ করে যেতেন, বলতেনই না। সেইজন্য একে বলা হয় জামিউন ওয়া মানিউন। আমাদের কথাবার্তাগুলো যদি এরকম হয় তাহলে মানুষ বিরক্ত হবে না, কারণ যা দরকার আপনি তা বলছেন, যা দরকার নেই সেগুলোকে সময় নষ্ট না করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই চেষ্টাটা আমরা ইনশাআল্লাহ করব। এটা গেল আমার ২ নাম্বার পরামর্শ।
আপনারা জানেন যে আমি ইউটিউবের মনিটাইজেশন থেকে কোনো আয় করি না। কিন্তু প্রত্যেকটা ভিডিওর পেছনে নিশ্চয়ই অনেক খরচ আছে। এজন্য আপনারা যদি আমাকে সাপোর্ট করতে চান তাহলে আমার কোনো একটা প্রোডাক্ট বা কোনো কোর্স কিনতে পারেন, যেটা আপনাদের জন্য উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
সব লিংক আমাদের ডিসক্রিপশনে দেওয়া আছে, কমেন্ট বক্সেও ইনশাআল্লাহ দেওয়া থাকবে। পাশাপাশি আমাদের চ্যানেলটাও সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ইতপূর্বে আমরা খারাপ অভ্যাস দূর করার সহজ ও কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। পড়ে নিন উপকৃত হবেন আশা করছি।
প্লান করে কথা বলতে হবে
৩ নাম্বারটা হচ্ছে আমরা কথার ভেতর দিয়ে একটা প্রভাব, একটা মুগ্ধতা রেখে আসবার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দেখুন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে দোয়া করেছিলেন।
চারটা জিনিস তাঁর দোয়ার মধ্যে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট ছিল যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে বলেছিলেন—“ওয়াজআলি লিসান সিদকিন ফিল আখিরিন” (হে আল্লাহ! পরবর্তী মানুষগুলোর মধ্যে আমার সুনাম, সুখ্যাতি বজায় রেখো)। তার মানে নবীদের প্র্যাকটিস ছিল, নবীদের চর্চা ছিল, যখনই তারা কোনো কাজ করতেন বা কথা বলতেন তারা পজিটিভলি একটা ইমপ্রেশন রেখে আসবার চেষ্টা করতেন।
এজন্য আপনি যখন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবেন এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন যে এমন কোনো কথা বলবেন, এমন কোনো পরামর্শ দেবেন, এমন কোনো রিয়্যাকশন দেবেন যাতে কারো মনে সেটা গেঁথে যায়। এটা করতে হলে প্ল্যান করতে হবে, না হলে যা মনে আসছে হুট করে বলে ফেললে হবে না।
তাই প্ল্যান করে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করব যাতে আমি চলে গেলেও আমার একটা ইমপ্রেশন, মুগ্ধতা মানুষের ভেতরে থেকে যায়। এই চেষ্টাটা আমরা ইনশাআল্লাহ করব। এটা গেল আমার কথা বলার ৫টি কৌশল এর ৩ নাম্বার পরামর্শ।
শ্রোতাকে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলুন
৪ নাম্বার পরামর্শটা হলো, যখন আমি মানুষের সাথে কথা বলব তখন যেন অন্যজন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে পারে এইভাবে কথাবার্তা বলা। সংক্ষেপে বললে মানুষের সাথে কথা বলতে হবে তাকে হিরো ভেবে। উদাহরণ দিই—আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যখনই তারা কারো সাথে কথাবার্তা বলেন তখন এমনভাবে বলেন যেন সে নিজেই সব বোঝে, তার স্টোরিই বারবার বলতে থাকে।
কেউ আপনার কাছে দুঃখ বলতে এলো, আপনি উল্টা আপনার নিজের গল্প শুরু করলেন—“আরে ভাই, আমার সাথে তো আরও এরকম এরকম হয়েছে।” এতে যে মানুষটা আপনার কাছে বলতে এলো, সে নিজের গুরুত্ব হারাল। তাই এই চেষ্টাটা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।
কথা বলার ৫টি কৌশল এর ৪ নাম্বার পরামর্শ হলো, কথাবার্তায় আপনি হিরো নন, আপনি গুরুত্বপূর্ণ নন, বরং যিনি কথা বলছেন তিনিই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি জাস্ট একজন শ্রোতা। এই চিন্তা করে কথাবার্তা বললে মানুষ মুগ্ধ হবে, সম্মানিত বোধ করবে এবং আপনাকে মনে রাখবে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া – প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফল!
শুনব বোঝার জন্য
কথা বলার ৫টি কৌশল এর সর্বশেষ ৫ নাম্বার পরামর্শ হলো, যখন আমি কারো সাথে কথাবার্তা বলব, আমি তার কথা এই জন্য শুনব না যে তাকে রিপ্লাই দিতে হবে, বরং শুনব বোঝার জন্য। মানে আমি তাকে বুঝতে চাই, তাকে সম্মানিত বোধ করাতে চাই। যদি আমি সত্যিই বুঝবার উদ্দেশ্যে শুনি, তাহলে মানুষ দেখবে আমি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে তাকে সম্মানিত মনে হবে, সে মুগ্ধ হবে।
কথা বলার ৫টি কৌশল পুরো ব্যাপারটা যদি আমি সামারি করি—
১ নাম্বার, আমার উদ্দেশ্য হবে নেকি ও সওয়াব পাওয়া।
২ নাম্বার, কথাবার্তায় যা দরকার তাই থাকবে, অপ্রয়োজনীয় বাদ যাবে।
৩ নাম্বার, কথায় মুগ্ধতা রাখার চেষ্টা করব।
৪ নাম্বার, অন্যজনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা।
৫ নাম্বার, শুনব বোঝার জন্য।
যদি কথা বলার ৫টি কৌশল ফলো করি, মানুষ সত্যিকারের অর্থেই মুগ্ধ হবে, বিরক্ত হবে না, আর আপনাকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে ইনশাআল্লাহ। আমার বিশ্বাস কথা বলার ৫টি কৌশল অবলম্বন করলে শ্রোতা মুগ্ধ হতে বাধ্য! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সকলকে যেন কথাবার্তা ও যোগাযোগের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ যথাযথভাবে করতে তাওফিক দান করেন। আমিন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
এই বিষয়ে আরও বোঝার জন্য এই ভিডিওটি দেখতে পারেন-
1 Comment
Pingback: ভিও থ্রি দিয়ে ভিডিও তৈরির সম্পূর্ণ গাইড লাইন - Ultimate Free Guide for Generate video using Veo 3 - NiceTrix