আসসালামু আলাইকুম। যদি বলি ৮ মিনিটে এইচএসসি আইসিটির সাজেশন দিয়ে পুরো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব! – তো আজকে আমরা কথা বলব আইসিটি (HSC ICT Suggestion 2026) নিয়ে। এই সাবজেক্টটা সায়েন্স, আর্টস, কমার্স সবার জন্য আছে। এবং এই সাবজেক্টটা সায়েন্সের ছাত্ররা একটু সুবিধা পায়, আর্টস ও কমার্সের শিক্ষার্থীদের অবস্থা একদম খারাপ। সায়েন্সের ছাত্রদেরও আসলে এই সাবজেক্ট পড়ার ইচ্ছা থাকে না, পরীক্ষার আগের দিন খুলে দেখে।
মেজরিটি স্টুডেন্ট মাঝেমধ্যে এই সাবজেক্টে প্লাস মিস করে ফেলে। শিক্ষকরা আবার ভাবে যে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা অনেক স্মার্ট, তাই একটু প্যাঁচানো প্রশ্ন দিয়ে দেয়। তখন তারা কান্নাকাটি করে এইচএসসিতে প্লাসটা মিস করে আসে।
এইচএসসি আইসিটির সাজেশন ২০২৬
এইচএসসি আইসিটির সাজেশন প্রথমে আমরা আইসিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বলে দেব। আমার মতে, আইসিটিতে প্লাস পাওয়া বা পাশ করা সবচেয়ে সহজ। শুধু এই কয়েকটা ইম্পরট্যান্ট টপিক পড়লেই হবে।
যতই সাজেশন দেই তোমাদের পড়তে হবে। আমরা যেই হারে সব বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমের উপর নির্ভর তার জন্য ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া ছড়িয়ে পড়ছে
অধ্যায় ১: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
এইচএসসি আইসিটির সাজেশন এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। এরপর পড়তে হবে প্রাইও সার্জারি এবং বায়োমেট্রিকস। এছাড়া সমাজ জীবনে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব অংশটা পড়তে হবে। বই থেকে এই কয়েকটা টপিক পড়লেই দেখবেন পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে।
সো আইসিটি প্রথম অধ্যায় যেটা— “তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ” — সেখানে আমাকে প্রথম পড়তে হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে। মূলত প্রশ্নের ইঙ্গিতগুলো বুঝতে হয়। যেমন ধরো আমার এক বন্ধু মুখের মধ্যে একখান মেশিন লাগায়, চাঁদের দেশে চলে গেছে—সে কী করছিল? ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। হ্যাঁ, সো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে জানতে হবে।
তৃতীয় যেটা, সেটা হলো প্রচুর আসে—খ নম্বরে বা গ নম্বরে দেয়—ক্রায়োসার্জারি। অর্থাৎ অত্যাধিক ঠান্ডা দিয়ে চিকিৎসা, রক্তপাতবিহীন চিকিৎসা। আর সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট, মোস্ট ইম্পরট্যান্ট যে প্রশ্ন আসবে সেটা হলো বায়োমেট্রিক্স। বায়োমেট্রিক্স থেকে প্রশ্ন আসবেই। সবচেয়ে বেশি ঘন ঘন নম্বরে থাকবে নিঃসন্দেহে বায়োমেট্রিক্স। এখানে জানতে হবে কোনটা কোনটার চেয়ে ভালো, কোনটা সহজ, কোনটা কম খরচে, কোনটা বেশি ইউজ হয়—এই পার্থক্যগুলো।
অধ্যায় ২: কমিউনিকেশন সিস্টেমস ও নেটওয়ার্কিং

এখানে প্রথমে পড়তে হবে ডাটা ট্রান্সমিশন মেথড এবং ডাটা ট্রান্সমিশন মোড (ফুল ডুপ্লেক্স, হাফ ডুপ্লেক্স, সিমপ্লেক্স)। এরপর কমিউনিকেশন মাধ্যম—কো-অক্সিয়াল, টুইস্টেড, বিশেষ করে অপটিক্যাল ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তারপর পড়তে হবে তারবিহীন মাধ্যমের মধ্যে মাইক্রোওয়েভ, রেডিও ওয়েভ, ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন (ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নেটওয়ার্ক টপোলজি। এই চ্যাপ্টার অনেক বড় হলেও নির্দিষ্ট কিছু টপিক পড়লেই যথেষ্ট।
নেটওয়ার্ক চ্যাপ্টারটা বিশাল বড়, কিন্তু প্রশ্ন আসে মূলত দুই জায়গা থেকে। প্রথমটা হলো টপোলজি। কোন টপোলজি ভালো, কোনটা খারাপ, বৈশিষ্ট্য কী, কোনটা ফুঁটা গেলে সব নষ্ট হয়ে যায়, কোনটা ফুঁটা গেলে সমস্যা হয় না, কোনটার এক্সপেরিমেন্ট করা সহজ—এসব জানতে হবে। এরপর আসে তার মাধ্যম। যেমন টুইস্টেড পেয়ার কেবল আর অপটিক্যাল ফাইবার—এসব বেশি আসে। এছাড়া ডাটা ট্রান্সমিশনের মোড আর মেথড—এই দুইটা আলাদা জিনিস, এগুলোও পড়ে রাখতে হবে।
এইচএসসি আইসিটির সাজেশন এ আমি যে টপিকগুলো বলছি, এগুলো খুব কনসেপ্টুয়াল কিছু না। এগুলো প্রশ্ন-উত্তরের মতো সহজ। আমার সাজেশনটা তৈরি করেছি কিউন এআইসিটি নোটস বই থেকে। বইটা মোট ১৭০ পেজের। কিন্তু এর বাইরে পরীক্ষায় কোনো প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা নেই। এবং আমি যে প্রশ্নগুলো বলছি, এগুলোর পিসাইজ মুখস্ত করার মতো উত্তর ওই বইতে দেওয়া আছে। তোমরা সেগুলো লিখে আসলেই নাম্বার পাবে ইনশাআল্লাহ।
যারা লাস্ট মোমেন্টে আইসিটি পড়ো নাই, ধরে নিলাম যে একবারও পড়ো নাই, তোমরা শুধু এই বইটার প্রশ্নগুলো পড়ো চ্যাপ্টার অনুযায়ী। ইনশাআল্লাহ পার হয়ে যাবে, কোনো সমস্যা হবে না। কেউ যদি আইসিটি বই না কিনে থাকে, অবশ্যই কিনবা।
অধ্যায় ৩: সংখ্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল ডিভাইস

এখান থেকে পড়তে হবে বাইনারি যোগ-বিয়োগ, দুইয়ের পরিপূরক পদ্ধতি, এবং সংখ্যা পদ্ধতির রূপান্তর। এরপর পড়তে হবে বুলিয়ান অ্যালজেব্রা, যেখানে ডি মর্গ্যানের উপপাদ্য ও কয়েকটা প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া সত্যক সারণিতে গেটের প্রমাণ পড়তে হবে। বিশেষভাবে সার্বজনীন গেট (NAND, NOR) খুব গুরুত্বপূর্ণ। XOR, XNOR, এবং হাফ এডার, ফুল এডারও পড়ে নিতে হবে।
সংখ্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল লজিক। এটা হলো আমাদের প্রত্যেকের ভয়ের জায়গা। মূলত সংখ্যা পদ্ধতি থেকেই বেশি কষে প্রশ্ন আসে। ২ এর পদ্ধতি, যোগ-বিয়োগ শিখবা। এটা ক্যালকুলেটর দিয়েও করা যায়। এইচএসসি আইসিটির সাজেশন ফলো করলে ট্রিকসটা শিখে যাবে, ক্যালকুলেটর দিয়ে মিলিয়ে দিবা। তারপর ব্যাক ক্যালকুলেশন করে উত্তর দেবে।
তারপর হলো সার্বজনীন গেট—AND, OR, NOT গেট। এদের নিয়ে বেশি আসে। NAND গেট আর NOR গেট দিয়েও বাস্তবায়ন শিখে যেতে হবে। এরপর যে টপিকটা আছে সেটা খুব বেশি কমন আসে না, কিন্তু মাঝে মাঝে টাইম ডিভিশন বা ডিমরগ্যান ল’ এর প্রমাণ বেশি আসে। কয়েকটা প্র্যাকটিস করলে পরীক্ষায় মোটামুটি পারা যায়।
অধ্যায় ৪: ওয়েব ডিজাইন ও HTML
ওয়েব ডিজাইন ও HTML পাঠের এইচএসসি আইসিটির সাজেশন হিসেবে থাকলো HTML ট্যাগ ও সিনট্যাক্স, হাইপারলিংক, চিত্র যোগ, এবং বিশেষভাবে টেবিল। অনেক সময় পরীক্ষায় টেবিল বানাতে বলা হয়। এছাড়া ওয়েবসাইটের কাঠামো সম্পর্কেও প্রশ্ন আসতে পারে।
এখানে সবচেয়ে বেশি আসে ওয়েবপেজ তৈরি করতে বলা হয়। যেমন—হাইপারলিংক, লিস্ট, টেবিল বানানো ইত্যাদি। প্যারাগ্রাফ বানানো তো তোমরা পারোই। এছাড়া মৌলিক কাঠামো সম্পর্কিত প্রশ্নও আসে।
অধ্যায় ৫: প্রোগ্রামিং ভাষা
এখানে পড়তে হবে ইন্টারপ্রেটার ও কম্পাইলার, অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্ট, এবং প্রোগ্রাম ডিজাইন মডেল। C প্রোগ্রামিং-এ লুপ ও কন্ডিশনাল স্টেটমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পূর্ববর্তী বোর্ড প্রশ্ন অনুশীলন করতে হবে।
প্রোগ্রামিং ভাষা চ্যাপ্টার সাধারণত আমি সাজেস্ট করি না, যদি না তোমার কমন আসে। তবে কমন আসলে ভালো। এখানে প্রথমেই আসে ইন্টারপ্রেটার ও কম্পাইলারের মধ্যে পার্থক্য। এরপর কন্ডিশনাল স্টেটমেন্ট—তিনটা বা চারটা সংখ্যার মধ্যে বড় বের করা। লুপ স্টেটমেন্ট থেকেও কোড আসে। তবে এখানে কমন পাওয়ার জন্য তোমরা লাস্ট কয়েক বছরের বোর্ড CQ দেখবে।
তোমরা যদি বোর্ড CQ থেকে প্রথম দশটা কমপ্লিট করতে পারো, তাহলে তোমাদের কাজ শেষ। আর কোডের সাথে ফ্লোচার্টও লিখতে হবে। যেমন—তিনটা সংখ্যার মধ্যে বড় বা ছোট বের করা, কিংবা কোনো একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত যোগফল বের করা। কোড যে পারে, ফ্লোচার্টও লিখতে পারবে। তবে পার্সোনালি এই চ্যাপ্টারটা আমার কাছে কমন আসে না, আমি এটা এড়িয়ে যাই।
অধ্যায় ৬: ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
সবচেয়ে সহজ অধ্যায়। এখানে পড়তে হবে রিলেশন (one-to-one, one-to-many, many-to-one), ডাটাবেজ এনক্রিপশন, এবং SQL কমান্ড (select, insert, delete, update)। এছাড়া ডাটাবেজ ডাটা টাইপ অংশ থেকে উদ্দীপক প্রশ্ন আসতে পারে।
আইসিটি নিয়ে এত প্যারা খাওয়ার দরকার নেই। অনলাইনে-অফলাইনে অনেক টাকা খরচ করারও দরকার নেই। শুধু এইচএসসি আইসিটির সাজেশন অনুযায়ী বইয়ের নির্দিষ্ট টপিকগুলো পড়লেই পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। এছাড়াও ভালো রেজাল্ট করতে হলে তোমার মধ্যে কোনো বাজে অভ্যাস থাকলে খারাপ অভ্যাস দূর করার সহজ ও কার্যকর কৌশল জেনে নিজেকে শুধরে নাও।
পরিশেষ
সো, এই দিয়েই আমাদের আইসিটি শেষ হয়ে গেল। আমি তোমাদের যে কয়টা টপিক বললাম, এই কয়টার বাইরে প্রশ্ন আসবে না তা না, কিন্তু এই কয়টা পড়লে ৫টা প্রশ্ন ফুললি উত্তর করতে পারবা।
আচ্ছা, এইটুকুই ছিল এইচএসসি আইসিটির সাজেশন – ৮ মিনিটে পুরো প্রস্তুতি – HSC ICT Suggestion; তোমাদের একদম লাস্ট মোমেন্টের জন্য সাজেশন দিলাম। অবশ্যই আমি যে টপিকগুলো বললাম, এই টপিকগুলো নিজে ভালোভাবে পড়বা। আমার আইসিটি নোটস থেকে পড়ো বা অন্য যেকোনো নোটস থেকে পড়ো। মুখস্ত করে গেলে দেখবা খাতা খুলে লেখা শুরু করছো।
কিন্তু MCQ টা একটু টাফ হয়। MCQ এর জন্য পার্সোনাল সাজেশন হলো মাহবুব স্যারের বই আর মুজিব স্যারের বইয়ের MCQ গুলো সলভ করে যাও। তাহলে দেখবা MCQ তে আলাদা এজ পাচ্ছো, ২০+ মার্কস পাওয়ার সুযোগ থাকবে। এইচএসসি আইসিটির সাজেশন – ৮ মিনিটে পুরো প্রস্তুতি – HSC ICT Suggestion অনুসরণ করে মোটামুটি ভালো নাম্বার পেয়ে আসবা, শুধু পাস নয়।
আরও জানতে নিচের ভিডিওটি দেখে নাও